শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন
বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রমত্তা সুগন্ধা নদীগর্ভে ভেঙে পড়ছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ মোশারেফ-রশিদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মাত্র একরাতের ব্যবধানেই পাউবোর বাঁধ ও স্কুলের পানির ট্যাংকিসহ উত্তর পাশের প্রায় ৭০০ বর্গফুট এলাকা নদীবক্ষে হারিয়ে গেছে। আজ (সোমবার) মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই স্কুল ভবনের নিচ থেকে মাটি দেবে গেছে নদীতে।
আকস্মিক এমন ভাঙনে স্কুল ভবনের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকাÑবরিশাল মহাসড়কের শতকোটি টাকার বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (দোয়ারিকা সেতু) পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। সেতুর পাদদেশে মহাসড়কের পূর্ব দিকের সংযোগে মুখের গাইড ওয়ালও একইসাথে ভেঙ্গে পড়েছে নদীতে। সেতুর গার্ডার অঞ্চলেও গ্রাস করেছে ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লকের বাঁধের প্রায় ৭০ শতাংশ ইতোমধ্যে চলে গেছে নদীগর্ভে। এমতাবস্থায় হুমকির মুখে রয়েছে বরিশালে প্রবেশদ্বারের এ গুরুত্বপূর্ণ সেতু। অথচ এ ব্যাপারে যেনো মাথাব্যাথা নেই সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তরের।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, সেতুটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তাই এটি রক্ষার দায়িত্ব মূলত তাদের। সেতুর রক্ষার জন্য দরকার নদী শাসনসহ আলাদা বৃহৎ প্রকল্প। আমরা সওজকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এজন্য আমাদের দপ্তরে আলাদা কোনো অর্থবরাদ্দ নেই।
এদিকে বরিশালের সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা জানান, নদীভাঙন প্রতিরোধ করা আমাদের কাজ নয়। তাই ভাঙনরোধের কোন কারিগরি জ্ঞান কিংবা অর্থবরাদ্দ নেই সওজের। আমরা রাস্তাঘাট মেরামত করি। সরকারি সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠানের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য আর পরস্পরের ওপর দায় চাপানোর ঠেলাঠেলিতে এখন মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে প্রায় ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্বপ্নের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) সেতু।
সৈয়দ মোশারফ-রশিদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম রেজা জানান, এলজিইডির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাহাবুবুর রহমানসহ এলাকার কিছু মহতী মানুষের প্রচেষ্টায় বিগত ২০০৩ সালে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) সেতুর পাদদেশে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিবছর সন্তোষজনক ফলাফল ও বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করে আসছে স্কুলের কৃতি শিক্ষার্থীরা। অথচ ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য কেউ উদ্যোগে নেয়নি। স্কুলের সামনের পাউবোর ব্লক পাইলিং ভেঙে পড়ার পরে স্থানীয়ভাবে ৫ লক্ষাধিক টাকা অনুদান সংগ্রহ করে পার্কোপাইন ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল।
তবে এসব উদ্যোগ উত্তাল সুগন্ধা নদীর কাছে নিতান্তই যৎসামান্য। সীমিত অর্থ আর শক্তি দিয়ে অসীম শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা অসম্ভব। এজন্য দরকার ছিল সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অবহেলায় বর্তমানে স্কুলের সাথে সাথে নদীতে ভেঙে পড়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর গাইড ওয়ালও। এতে এখন তীব্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশদ্বারের এই সেতুটি।
এদিকে খবর পেয়ে বিকেলে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের এমপি অ্যাড. শেখ মোঃ টিপু সুলতান ও বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এস.এম খালেদ হোসেন স্বপন।
এ ব্যাপারে এমপি অ্যাড. শেখ মোঃ টিপু সুলতান ক্ষোভের সঙ্গে জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠান পাউবো এবং সওজ একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা করার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।
গতবছর সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে সৈয়দ মোশারফ-রশিদা স্কুল ও বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলেও ফলাফল হয়নি কিছুই। দাপ্তরিক অবহেলায় স্কুলটি আজ নদীগর্ভে চলে গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ সেতুটির বিপর্যয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে আগামীকাল ঢাকায় গিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর সাথে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান স্থানীয় এমপি অ্যাড. শেখ মোঃ টিপু সুলতান।
Leave a Reply